Walk off-trail এ আজকে শুরু করছি পঞ্চম পর্ব: রকেট স্টিমার সার্ভিস
এই যান্ত্রিকতার মধ্যেও যারা একটু আয়েশি ভ্রমণ ভালবাসেন, সীসা-মুক্ত নির্মল বাতাসে নিজের প্রিয়জনের সাথে কিছুটা সময় কাটাতে চান, আর সবচেয়ে বড় কথা যারা নদী ভালোবাসেন আজকের লেখাটা শুধুমাত্র তাদের জন্যই। আজকে আমরা কথা বলব, প্রায় ১০০ বছরের পুরানো প্যাডেল স্টিমার সার্ভিস ‘রকেট’ নিয়ে।
“কিসে যাবা?”, ‘রকেটে!’
নাম শুনে অবাক হচ্ছেন তো? খুবই স্বাভাবিক। রকেট সার্ভিস আবার কি? অবাক হবার কিছু নাই। এই রকেট মহাকাশে চলে না, চলে নদীতে। একবারে বাংলাদেশের প্রায় ১৭ থেকে ২০ টি নদীতে ভেসে বেড়ানোর সুযোগ লুফে নিতেই এই রকেটে চড়া। ‘রকেট’ স্টিমারের রয়েছে শত বছরের পুরনো ইতিহাস। একসময় এদেশের লোকেরা এই স্টিমারে করে কলকাতা যেত। এখন তো কলকাতা যাবার সুযোগ নেই তবে ঢাকা থেকে বরিশাল হয়ে খুলনা যাতায়াত করছে নিয়মিত। যদিও নাব্যতা সংকটের কারণে মাঝে মাঝে খুলনা পর্যন্ত যাওয়া সম্ভব হয় না। তখন সেই রুট থেমে যায় বাগেরহাটের মোড়লগঞ্জে।
‘রকেট’ স্টিমারের রয়েছে শত বছরের পুরনো ইতিহাস। একসময় এদেশের লোকেরা এই স্টিমারে করে কলকাতা যেত। এখন তো কলকাতা যাবার সুযোগ নেই তবে ঢাকা থেকে বরিশাল হয়ে খুলনা যাতায়াত করছে নিয়মিত। যদিও নাব্যতা সংকটের কারণে মাঝে মাঝে খুলনা পর্যন্ত যাওয়া সম্ভব হয় না। তখন সেই রুট থেমে যায় বাগেরহাটের মোড়লগঞ্জে।
ইতিহাস
সারা বিশ্বে হাতে গোনা যে কটি “রকেট” স্টিমার আছে তার মধ্যে ৫ টি আছে বাংলাদেশে। এগুলোর নামগুলোও বেশ বাহারি : মাসহুদ, অস্ট্রিচ, লেপচা, ও টার্ন। এর মধ্যে বড় হল ‘মাসহুদ’ ও ‘অস্ট্রিচ’৷ প্রায় শতবর্ষী পুরনো এ স্টিমার দুটি তৈরি হয়েছিল যথাক্রমে ১৯২৮ ও ১৯৩৮ সালে কলকাতার গার্ডেন রিচ ওয়ার্কশপে। শুরুর দিকে এসব স্টিমারে জ্বালানী হিসেবে কয়লা ব্যবহার করা হতো। আশির দশকের শুরুতে এগুলো ডিজেল ইঞ্জিনে রূপান্তরিত করা হয়। বড় বড় দুটি প্যাডেল দিয়ে সামনের দিকে এগোয় আর তাই এর অন্য নাম প্যাডেল স্টিমার। তবে রকেট স্টিমার কেন বলা হয় তার কোন নির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। সম্ভবত ওই সময়ে এটাই সবচেয়ে দ্রুতগতির নৌযান ছিল তাই হয়ত এমন নাম।
একটা মজার ঘটনা বলি, একটা সময় ইংল্যান্ডের “রিভার আর স্টিম ন্যাভিগেশন” (আর এস এন) কোম্পানির বিশাল বিশাল সব স্টিমার চলাচল করত এদেশে। বাহারি সব নাম ছিল এদের- ফ্লেমিংগো, ফ্লোরিকান, বেলুচি ইত্যাদি। তো ব্রিটিশ সরকার যখন বরিশালে রেলপথ সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছিল তখন নাকি এই আর এস এন কোম্পানির লোকেরা ইংল্যান্ড থেকে কলকাঠি নেড়েছিল যাতে বরিশালে রেলপথ না আসতে পারে। ভাবুন তো কি একটা অবস্থা!
রকেট স্টিমার ছাড়ল!
শুরুটা হবে সদরঘাটে সন্ধ্যা ৬ টা ৩০ মিনিটে স্টিমারের ভোঁ ভোঁ শব্দ দিয়ে। ঢাকা আর নারায়ণগঞ্জ কে পাশ কাটিয়ে বুড়িগঙ্গা উপর দিয়ে রকেট যখন মেঘনায় পড়বে রাত তখন ৮ টা কি ৯ টা। আর সেদিন যদি পূর্ণিমা হয় তবে মনে রাখবেন বাকিটা ইতিহাস………
রাত সাড়ে এগারোটার দিকে রকেট পৌঁছবে চাঁদপুর ঘাটে। এসময় দোতলার দিকে সরে যাওয়াই ভাল কারণ চাঁদপুর থামলেই হুড়মুড় করে অনেক মানুষ উঠবে।চাঁদপুর থেকে ছেড়ে রকেট পদ্মা-মেঘনা-ডাকাতিয়ার মিলনস্থল অতিক্রম করবে। একটা সময় চারদিকে অথৈ জলরাশি ছাড়া কিছুই দেখবেন না।
রাতের খাবার
রাতের সৌন্দর্য উপভোগের এক ফাঁকে বাটলার কে ডেকে রাতের খাবার অর্ডার করুন। সাধারণত দু ধরণের সেট মেন্যু পাওয়া যায়। একটিতে ভুনা খিচুড়ি, ডিম আর চিকেন। আরেকটিতে সাদা ভাত, চিকেন আর দু পদের ভর্তা। খরচ পড়বে ২০০ টাকা। একসময় স্টিমারের বাটলারের রান্নার অনেক কদর ছিল, এখনো তার একটু অবশিষ্ট আছে। আশা করি তৃপ্তির ঢেঁকুর আস্তে হলেও তুলতে পারবেন। খাওয়া শেষে একটা ঘুম দেন। এরকম ফ্রেশ ঘুমের সুযোগ জীবনে আর নাও পেতে পারেন।
ঘুমাইয়া মুই বরিশালে
ঘুম থেকে উঠে দেখবেন বরিশাল চলে এসেছেন। এখানে আধাঘণ্টার বিরতি দিয়ে রকেট আবার ছুটে চলবে গন্তব্যের দিকে। আগের দিনের ছিমছাম রকেটকে কিন্তু আজকে আপনি অন্যরূপে দেখবেন। প্রতি ঘণ্টায় স্টপেজ আসবে, খালাসীদের ব্যস্ততা বাড়বে, কুলিদের হুড়োহুড়িতে রকেট হয়ে উঠবে প্রাণবন্ত। কিছুক্ষণ পরেই রকেট ঢুকবে গাবখান ক্যানেলে। সরু একটি ক্যানেল, দুপাশে সারি সারি গাছ পালা, সে এক অন্য রকম সৌন্দর্য।
সকাল সাড়ে ১০ টায় পৌঁছে যাবেন পিরোজপুরের হহুলারহাট। এখানে বেশ কিছুটা সময় থাকার পর আবার রওনা দেবে দক্ষিণের পথে। এভাবে দুপুর দেড়টার দিকে পৌঁছাবে বাগেরহাটের মোড়লগঞ্জ এ। এবার আপনার নামার পালা। মোড়লগঞ্জ এ নেমে বাসে করে চলে যান বাগেরহাট। ১ ঘণ্টার মত লাগবে। বাগেরহাট সহ দক্ষিণবঙ্গে এক্সপেরিয়েন্স করার জিনিসের তো অভাব নাই। সে আলাপ আরেকদিন হবে।
রকেট স্টিমার সার্ভিস নিয়ে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি
এবার আসুন জেনে নেই রকেট স্টিমারে ভ্রমণের প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো।প্রথমেই আপনাদের কে জানাব কোন কোন রুটে চলাচল করছে রকেট স্টিমার।
ভ্রমণ রুট: ঢাকা – চাঁদপুর – বরিশাল – ঝালকাঠি – কাউখালী – হুলারহাট – চরখালী – বড় মাছুয়া (মঠবাড়িয়া) – সন্ন্যাসী – মোড়লগঞ্জ । শুধু প্রতি বুধবার রকেট মংলা হয়ে খুলনা পর্যন্ত যায় ।
মনে রাখতে হবে
- বিদেশি টুরিস্টদের কাছে এই সার্ভিস টি বেশ জনপ্রিয়,অনেক টুরিস্ট আছেন যারা শুধু এই রকেট স্টিমারে ভ্রমণ করতেই বাংলাদেশে আসেন। তাই তাদের আনকমফোর্টেবল লাগে, এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
- যেহেতু ভ্রমণটি প্রায় ২০ ঘণ্টার, তাই যাদের মোশন সিকনেস আছে, তারা অবশ্যই বমির ঔষধ সাথে রাখবেন।
- অপ্রয়োজনীয় জিনিস নদীতে না ফেলে দয়া করে নির্ধারিত স্থানে ফেলবেন। প্লাস্টিক তো ভুলেও নদীতে ফেলা যাবে না।
তাহলে নদীমাতৃক বাংলাদেশকে কলোনিয়াল পর্দায় আরেকবার দেখতে আর পানিতে ভেজা অন্যরকম একটা ট্রিপ দিতে রকেটে ঘুরে আসেন। আপনার ভ্রমণ শুভ হোক।
এই ব্লগটি নিয়ে বিস্তারিত রিসার্চ করেছেন আসিফ আল বায়েস রাহি। আর ব্লগটি লিখেছেন আব্দুল্লাহ আল হাসিব।
Walk off-trailআমাদের নতুন সিরিজ। ৬ পর্বের এই ব্লগ সিরিজে আমরা বাংলাদেশের ৬ টা অফট্রেইল ট্র্যাভেলিং এর ডিটেইলস জানব। এই ট্রিপগুলা মোটেও বহু প্রচলিত না। এদের কয়েকটা খুবই কঠিন, ভয়ংকর; কয়েকটা খুবই সহজ কিন্তু খুব আন্ডাররেটেড, কয়েকটা একদমই সিম্পল। কিন্তু সবগুলা ট্রিপই অসাধারণ এক্সাইটিং এবং বেশ সস্তা। আপনার যা লাগবে সেটা টাকা না, সেটা হচ্ছে ইনফরমেশন, আগ্রহ এবং ট্র্যাভেলিং এর নেশা।
প্রথম পর্ব: সদরঘাট থেকে সেন্টমার্টিন | পানিপথের চতুর্থ যুদ্ধ!
দ্বিতীয় পর্ব: থানচি থেকে আলীকদম | বাংলার রোড র্যাশ!
তৃতীয় পর্ব: সুন্দরবন | মৌয়ালদের সাথে একদিনের থ্রিলার
চতুর্থ পর্ব: হরিনাছড়া সোয়াম্প ফরেস্ট | পাহাড়ের গহীনে নতুন জলাবন
ষষ্ঠ ও শেষ পর্ব: কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সাইক্লিং
Rocket vromone kaiuke kokhono bomi korte dekhini. Tai Bomir tablet rakhar kothae hashi passe.
এখন কি খুলনা পর্যন্ত যাতায়াত করে ? সব নদীতেই তো অনেক পানি আছে।
আর, যদি আসতে চাই, খুলনা বা মোরলগনজ হতে, তাহলে ষ্টীমার কয়টায় ছেড়ে আসে ??